জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ইসলামিক উপায় জেনে নিন
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ইসলামিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তাই আপনি যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার আমি কি জানতে চান। তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কারণ এই পোস্টটির মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ইসলামিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নেই জন্মনিয়ন্ত্রণ করার ইসলামিক উপায় সম্পর্কে।
সূচিপত্র
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ
জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক মতামত জানতে চান এমন অনেক ভাই-বোন আছেন। মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির জন্য এবং আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তায়ালা এই ভূখণ্ডকে মানুষের জন্য মহত্ত্ব দিয়েছেন। আর এই ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে না থাকে তাহলে দুনিয়া মূল্যহীন।
আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য আদম ও হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। আর আদম থেকে গোটা পৃথিবী মানুষে ভরে গেল। বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ মাথাব্যথার কারণ ও মুক্তির উপায় জানুন
মানুষ কখনই ভাবে না যে, আল্লাহ তায়ালা যখন একজন মানুষকে সৃষ্টি করেন, তাকে অবশ্যই তার রিজিকের ব্যবস্থা করতে হবে, কিন্তু সে চিন্তা না করেই মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি, হাজার হাজার শুক্রাণু হত্যা করছে। যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
সেজন্য আমাদের অবশ্যই জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক উপায় জেনে আপনি সঠিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
ইসলামিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
বাংলাদেশের অধিকাংশ বর্ণ মুসলিম তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। আমাদের সকলের উচিত জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু (সূরা নিসা আয়াত ২৯)।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ সাধারণত তিনটি উপায়ে করা হয়। ক. অস্থায়ী পদ্ধতি খ. স্থায়ী পদ্ধতি এবং গ. গর্ভপাত পদ্ধতি।
অস্থায়ী পদ্ধতি - এই পদ্ধতিটি স্বামী/স্ত্রীকে বন্ধ্যাত্ব দেয় না। যেমন চরম সহবাসের মুহূর্তে স্ত্রীর যোনির বাইরে বীর্যপাত করা। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে আজল (যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি পুরানো ও অস্থায়ী পদ্ধতি) অনুশীলন করতাম। (বাখারী ২/৭৮৪)। বড়ি খাওয়া, কনডম ব্যবহার, পেশীতে বড়ি ব্যবহার করা, সার্ভিক্স সাময়িকভাবে বন্ধ করা, ইনজেকশন নেওয়া ইত্যাদি। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বৈধ হবে।
1. দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে কিছু সময় দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের যত্নে কোনো কমতি না হয়।
2. সন্তান লালন-পালন করতে না পারলে
3. মহিলারা অসুস্থ হলে দুর্বল বা গর্ভধারণ করা বিপজ্জনক
4. স্তন্যপান করানো মা যদি আবার গর্ভবতী হয় তবে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তখন মায়ের দুধের মান খারাপ হতে পারে, যার ফলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে।
5. জাগতিক অসুবিধা ও সমস্যার কারণে বা হারাম ও হারাম খাওয়ার ফলে সন্তানের জন্ম হয়েছে এমন ধারণা নিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ করাও জায়েয।
স্থায়ী ব্যবস্থা - এই স্থায়ী ব্যবস্থা পুরুষ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অর্জন করা হয়। স্থায়ী পদ্ধতি যার দ্বারা মহিলা বা পুরুষ উর্বরতা হারায়। এ পদ্ধতিকে আলেমগণ সম্পূর্ণ অবৈধ বলেছেন। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) বাখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (উমদাতুল ক্বারী : ১৪/১৪ পৃ.)।
তবে যদি কোনো জরায়ুতে ক্যান্সার বা অন্য কোনো রোগ থাকে, যার কারণে জরায়ু কেটে ফেলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না, তাহলে জরায়ু কাটা জায়েয। এটি স্থায়ীভাবে গর্ভধারণের ক্ষমতাও নষ্ট করতে পারে।
যাইহোক, যে কোন পুরুষ বা মহিলা ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়ার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ইসলামি অবৈধ ও হারাম পদ্ধতি হবে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই যে লক্ষণ প্রকাশ পায় জেনে নিন বিস্তারিত
গর্ভপাত পদ্ধতি - গর্ভপাত পদ্ধতি হল জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি প্রাচীন পদ্ধতি। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অনেক উন্নতি সত্ত্বেও, এই পদ্ধতি এখনও বিশ্বের অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি অবৈধ। কিন্তু যদি কোন কারণে মহিলাটি খুব দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভাবস্থা তার জন্য বিপজ্জনক এবং গর্ভাবস্থার সময়কাল চার মাসের কম। ইসলামিক পণ্ডিতরা মতামত দেন যে তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। মেয়াদ চার মাসের বেশি হলে তা কোনোভাবেই বৈধ হবে না।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি স্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হলে সম্পদ দখল ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ ও হারাম।
আল-কোরআনে বলা হয়েছে, জীবিত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা তাকবীর, আয়াত ৮-৯)।
আমাদের দেশে অনেক নারী দারিদ্র্যের কারণে তাদের সন্তানদের হত্যা করে। এটা ইসলামে কখনোই নেই। কারণ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের এবং আপনার জন্য ব্যবস্থা করি। নিঃসন্দেহে তাদের হত্যা করা মহা অপরাধ।" (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩১)
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে ইসলাম কখনই স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সমর্থন করে না কারণ এটি ইসলামে অবৈধ এবং হারাম। নারী ও পুরুষ উভয়েই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুশীলন করতে পারে যা ইসলামে বৈধ এবং সমর্থিত।
জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচাইতে ভালো পদ্ধতি কোনটি
প্রিয়া পাঠক আজকের নিবন্ধে, আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তুলে ধরেছি। আমরা ইতিমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেছি। আমরা আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করি।
কিন্তু আপনার অবশ্যই জানা উচিত কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। আপনি অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন কারণ ইসলাম স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে বৈধ বলে মনে করে না।
- কনডম
- খাদ্য বড়ি
- ইনজেকশন
কনডম হল পরিবার পরিকল্পনার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি। এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং যেকোনো যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু এটি ব্যবহার করার জন্য পুরুষকে প্রতিবার সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হতে হবে। প্রতিটি সহবাসের জন্য একটি নতুন কনডম ব্যবহার করা উচিত। কনডম অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি ভাল পদ্ধতি।
ডায়েট পিল - প্রতিদিন একই সময়ে নেওয়া হলে সেরা ফলাফল। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু শারীরিক সমস্যা ছাড়া সবাই এটি গ্রহণ করতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে যেমন, খাবারের বড়িতে বেশ কিছু হরমোন থাকে যা মহিলাদের পিরিয়ডকে নিয়মিত করে, রক্তপাত কমায়, পেটে ব্যথা হয় না এবং পেটের ব্যথা কমায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। তাই অনেক মহিলাই পিল নিতে পছন্দ করেন।
ইনজেকশন - এটি জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি। তবে ইনজেকশনের ধরন অনুযায়ী প্রতি ৩/৪/৫ মাস অন্তর ইনজেকশন নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের পরামর্শ নিয়ে এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করতে হবে। এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিরাপদে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
পিল খাওয়া কি জায়েজ
বড়ি খাওয়া কি জায়েজ? এই সম্পর্কে জানতে, শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে আমাদের নিবন্ধ পড়ুন. বর্তমানে, খাদ্য বিল অনেক মহিলার পছন্দের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে একটি। অনেক মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি অস্থায়ী পদ্ধতি হিসাবে এটি ব্যবহার করেন।
অনেক মানুষ শরীরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই, এবং এটি অধিকাংশ মহিলাদের দ্বারা সহজেই মিলে যায়। পিল খাওয়া জায়েজ কিনা সে সম্পর্কে অনেকের মতামত রয়েছে।
অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ইসলামে অনুমোদিত এবং ইসলামে কিছু ব্যতিক্রম করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে, বড়ি খাওয়াও জায়েজ। একটি অস্থায়ী পদ্ধতি যেখানে স্বামী এবং স্ত্রী তাদের প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন ইসলামে অবৈধ এবং হারাম বলে বিবেচিত হয়।
কিন্তু আপনি যে কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে পারেন। অস্থায়ী পদ্ধতি মানে পুরুষ বা মহিলা কেউই উর্বরতা হারাবে না। পিল গ্রহণ এবং অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য বিশেষ ক্ষেত্র রয়েছে যা আপনাকে কিছু সময়ের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, এক/দুটি বাচ্চার পরে, আপনি বাচ্চা লালন-পালন না হওয়া পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেওয়ার পরে বড়ি খেতে পারেন।
আর যদি কোনো নারী শারীরিকভাবে দুর্বল এবং গর্ভধারণের পক্ষে বিপজ্জনক হয়, তাহলে সে ততক্ষণ পর্যন্ত সাময়িক খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন কারণে অস্থায়ীভাবে যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সাময়িকভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে তা পি আহল বা অন্য কোন পদ্ধতিই হোক।
সন্তান না নিলে কি গুনাহ হয়
জন্মনিয়ন্ত্রণের ইসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে আজকের নিবন্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর রয়েছে যা আপনার অনেক উপকারে আসবে। অনেক দম্পতি আছে যারা সন্তান নিতে চায় না এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানতে চায়, সন্তান না হওয়া কি গুনাহ? আসলে এটা সম্পর্কে কিছু জানি. নবী-রাসূল নবী-রাসূল ছোট-বড় সকলেরই খতনা করেছেন এবং সন্তান ধারণ করাই আল্লাহর সর্বোত্তম চিকিৎসা।
মেয়ে হোক বা ছেলে। অনেক পরিবার আছে যারা যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ে করে। কিন্তু এমন অনেক পরিবার আছে যারা সন্তান চায় না এবং দারিদ্র্যের কারণে তাদের সন্তানদের হত্যা করে। আমরা এ ব্যাপারে উপরে উল্লেখিত একটি হাদীস নাযিল করেছি।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, "আল্লাহ তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্র সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবিকা দান করেছেন।" (সূরা-16 নাহল, আয়াত: 72)।
শিশুরা ভবিষ্যতের নেতা কারণ যৌবন থেকে ধীরে ধীরে আপনি বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে শিশুই আপনার যত্ন নেবে এবং সরবরাহ করবে। আর আপনার সম্পদ ভাগ করে দেওয়া হবে যদি আপনি নিঃসন্তান হন বা সন্তান নিতে না চান তাহলে সেই সম্পদ আপনার ভবিষ্যতে কোন কাজে আসবে না এবং এর যত্ন নেওয়ার কেউ থাকবে না। তাই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু ভেবেচিন্তে করেন। আল্লাহ আমাদের জন্য বিয়ে ও সন্তান ধারণের জন্য যা আদেশ করেছেন তা পালন করা প্রত্যেকের জন্য ফরজ।
শিশুরা মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুরা নিষ্পাপ, শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। মানুষের জীবনের গতিপথ শৈশবে নির্ধারিত হয়। তাই ইসলাম শৈশবকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশুই প্রকৃতিতে জন্মায় (ইসলাম)’ (তিরমিজি)। হজরত আবু রাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি, যখন হযরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করেন, তখন তিনি নামাযের আযানের মতো কানে আযান দিতেন। (তিরমিযী, খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 183)।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিশুদের কোলে নিতেন। একবার তিনি এক সাহাবীর সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন এবং শিশুটি তার কোলে প্রস্রাব করল। কিন্তু এতে তিনি বিচলিত হননি।
তাই উপরে আমরা হাদিস থেকে বিভিন্ন তথ্য জেনেছি। প্রত্যেক যুবতীর দ্বারা বিবাহ এবং সন্তান দত্তক গ্রহণ অবশ্যই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হতে হবে এবং অবশ্যই তা ইসলামী রীতিনীতি অনুযায়ী হতে হবে। আপনি যদি এটি পর্যবেক্ষণ না করেন তবে আপনি অবশ্যই যোগ দিতে পারেন।
জন্মনিয়ন্ত্রণ করা কি জায়েজ
স্থায়ী পদ্ধতি -- যার দ্বারা নারী বা পুরুষ উর্বরতা হারায়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ অবৈধ। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন, و هو محرم بالاتفاق অর্থাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন সর্বসম্মতিক্রমে হারাম।
অস্থায়ী পদ্ধতি -- যা স্বামী/স্ত্রীকে বন্ধ্যা করে না। যেমন: সহবাসের ক্লাইম্যাক্সের মুহূর্তে স্ত্রীর যোনির বাইরে বীর্যপাত করা, কনডম জেলি, ক্রিম, ফোম, ডাউচ ইত্যাদি ব্যবহার করা, বড়ি খাওয়া, সাময়িকভাবে জরায়ু মুখ বন্ধ করা, ইনজেকশন নেওয়া ইত্যাদি। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র বৈধ হবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে।
দুই সন্তানের জন্মের মাঝে কিছুটা সময় দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন ও যত্ন সঠিকভাবে করা যায়। কোনো কারণে নারী সন্তান লালন-পালন করতে না পারলে। যদি গর্ভাবস্থা বিপজ্জনক হয় কারণ মহিলা অসুস্থ এবং দুর্বল।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপায়
জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সবাই গর্ভনিরোধক পিল বা কনডমের উপর নির্ভর করে। কিন্তু, আধুনিক পদ্ধতি ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ বিষয়ে কোনো ধারণা থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। একজন মহিলার স্বাভাবিক মাসিক চক্র স্বাভাবিকভাবেই নির্ধারিত হয়।
এর মধ্যে এমন দিন রয়েছে, যেগুলোকে নিরাপদ দিন বা নিরাপদ সময় বলা হয়। এই দিনগুলিতে সহবাস গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বহন করে না। সেফ পিরিয়ডের দিনগুলোও প্রকৃতিতে নির্ধারিত। এ কারণে একে প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনা বলা যেতে পারে।
ডাক্তাররা কখনও কখনও এটিকে ক্যালেন্ডার পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে জানতে হবে মাসিক চক্রের নিরাপদ দিনগুলি কোনটি।
এই পদ্ধতির জন্য প্রথমে আপনাকে জানতে হবে মাসিক চক্র নিয়মিত হচ্ছে কিনা। এতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
মাসিকের পরপর দিনের ন্যূনতম সংখ্যা থেকে ১৮ দিন বিয়োগ করতে হবে। এই দিনটি পিরিয়ডের প্রথম দিন থেকে প্রথম অনিরাপদ দিন। আপনি যদি দীর্ঘতম টানা পিরিয়ড থেকে 10 দিন বিয়োগ করেন, তাহলে এই দিনটি মাসিকের প্রথম দিন থেকে শেষ অনিরাপদ দিন। ধরুন আপনার পিরিয়ড প্রতি 28 থেকে 20 দিনে হয়। কিন্তু 28-18 = 10, অর্থাৎ পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রায় 9 দিন আপনার জন্য নিরাপদ, এই দিনগুলোতে কোনো পদ্ধতি ব্যবহার না করেই মিলন সম্ভব।
অনিরাপদ দিন শুরু হয় ১০ম দিন থেকে। তাই এই দিন থেকে আপনাকে সংযম করতে হবে।
30 দিন হল দীর্ঘতম মাসিক চক্র। সুতরাং 30-10 = 20, অর্থাৎ, দিন 20 শেষ অনিরাপদ দিন। 21 তম দিন থেকে আবার অবাধে সহবাস করা যাবে। গর্ভধারণের কোন সম্ভাবনা নেই। যাইহোক, এটি অরক্ষিত মিলনের 10 থেকে 20 দিনের মধ্যে গর্ভধারণ করতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনার পিরিয়ডের প্রথম সাত দিন এবং তার পরের প্রথম সাত দিন সহবাস করা নিরাপদ।
তবে পিরিয়ড নিয়মিত না হলে এই পদ্ধতি কাজ করবে না। উপরন্তু, প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ 80 শতাংশ নিরাপদ। সাধারণত, অনিয়মিত পিরিয়ড, অনিরাপদ দিনে মিলন, পিরিয়ড মিস হওয়ার কারণে স্বাভাবিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যর্থ হতে পারে। তাই সঠিকভাবে জানার জন্য অন্তত একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
কিছু পুরুষ তাদের দীর্ঘ শুক্রাণুর কারণে সফল হতে পারে না। সেক্ষেত্রে অনিরাপদ দিন দু’দিন বাড়াতে হবে। অনেকে এটাকে প্রোগ্রামড সেক্স বলে। অনেকে এই বিষয়ে সন্দিহান, কিন্তু একবার আপনি এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, এটি অনেক সহজ এবং আরও আরামদায়ক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ইসলামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি জায়েজ
ইসলামে কি জন্মনিয়ন্ত্রণ জায়েজ? জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি বৈধ? আমি সেটা জানতে চাই।
উত্তরঃ ভাই আপনি চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। বাচ্চাদের কিভাবে খাওয়াবো, কিভাবে পোশাক পরাবো এই চিন্তা থেকে কেউ যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে তবে তা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা রিযিকের মালিক হলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, রিযিক দাতা হলেন আল্লাহ তায়ালা।
আরো পড়ুনঃ নাকের পলিপাস থেকে মুক্তি মিলে তিন উপায়ে জেনে নিন বিস্তারিত
কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেমগণ বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র দুটি অবস্থায় করা যায়। প্রথমত, এই মুহুর্তে মহিলাটি একটি সন্তান ধারণ করলে বড় বিপদ হতে পারে, অর্থাৎ শারীরিক কারণে এই অবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আগে জন্ম নেওয়া শিশুর দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোর অধিকার রয়েছে। "মায়েরা তাদের সন্তানদের দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করাবেন"। এই দুই বছরের মধ্যে মা গর্ভধারণ করলে আগের সন্তান অসুস্থ হয়ে যেতে পারে বা তার অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে।
এ দুটি কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম বলেন, এ দুটি কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার কথা চিন্তা করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েয নয়। এটি একটি হারাম কাজ। ইসলাম যুক্তিসঙ্গত, শরীয়াহ-সম্মত কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণের অনুমতি দেয়।
প্রিয় বন্ধুরা জন্মনিয়ন্ত্রণ ইসলামিক উপায় সম্পর্কে আপনাদের যদি কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমাদের পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url